ব্রেস্ট (স্তন) ক্যান্সার মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক সাধারণ অ-ত্বকীয় ক্যান্সার। একজন মহিলার জীবদ্দশায় স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আটজন এর মধ্যে একজন। তাহলে ইতোমধ্যেই স্তন ক্যান্সারের ভয়াবহতা সম্পর্কে কিছুটা হলেও অবগত হতে পেরেছি নিশ্চয়ই! আমাদের এই আর্টিকেল স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সাবলীল একটা ধারণা উপস্থাপনের চেষ্টা এবং স্তন ক্যান্সার থেকে নিজেরা নিজেদের অবস্থান থেকে কিভাবে সচেতন হতে পারি সেটিই আজ তুলে ধরা হবে।
আমার স্তন ক্যান্সার আছে আমি কীভাবে জানবো?
- হাতের তিনটি মাঝারি আঙ্গুলের ফ্ল্যাট অংশ দিয়ে হালকা, মাঝারী ও দৃঢ় চাপ দিয়ে পুরো স্তন এবং বগলের অংশ চাপা। প্রতি মাসে উভয় স্তনে কোনো পিন্ড, ঘন হওয়া, কড়া গাট এর মতো পরিবর্তন লক্ষ করা।
- আয়নার সামনে- বাহুর দিকের স্তনকে দৃশ্যমান করে সেই বাহুকে উচুঁ করুন। দেহরেখায়, নিপলে ( স্তনবৃন্ত), স্তনের চারপাশের জায়গা কোনো পরিবর্তন আছে কিনা লক্ষ্য করুন। তারপর আপনার হাতের তালুকে আপনার নিতম্বের উপর শিথিল করে রাখুন এবং আপনার বুকের পেশী গুলোকে নমনীয় করার জন্য দৃঢ়ভাবে চাপুন। বাম ও ডান স্তন হুবহু মিল হবে না। কোনো স্তনে পিন্ড, ঘন হওয়া, বেঁকে যাওয়ার মতো পরিবর্তন লক্ষণীয় হবে।
- শায়িত অবস্থায় স্তনের টিস্যু বুকের চারপাশে ছড়িয়ে থাকে। ডান কাঁধের নীচে বালিশ রেখে ডান হাতটি মাথার পিছনে রাখুন। বাম হাত ব্যবহার করে আঙ্গুলের ফ্ল্যাট অংশগুলি ডান স্তনের চারপাশে আলতো করে পুরো স্তনের অঞ্চল এবং বগলটি ঢেকে চাপ দিন। স্তনবৃন্ত চেপে ধরুন, ব্লাড বা পিন্ড আকারের কিছু অনুভূত হয় কিনা লক্ষ করুন।
লক্ষণ:
১/ স্তন বা বগলে পিন্ডাকৃতির উপস্থিতি।
২/ স্তনে বা স্তন বৃন্তে( নিপল) ব্যাথা অনুভব।
৩/ স্তন বা স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন।
৪/ স্তনবৃন্ত হতে রক্ত নিগর্মন।
৫/ স্তনের অংশ ঘন না ফোলা হওয়া।
৬/ স্তনবৃন্তের অঞ্চল বা স্তনে লালচে বা অস্থির ত্বক।

বর্তমানে আমরা যদি রোগ প্রতিরোধ এর উপায় গুলো সম্পর্কে অবগত থাকি তাহলে স্তন ক্যান্সার এর মতো রোগ থেকে নিজেরা সচেতন থাকতে পারবো।
আটটি সাধারণ পদক্ষেপ স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
১/ স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা: বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরী কারণ,অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সার ও রোগ এর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে বিশেষত মেনোপজের পর।
২/ নিয়মিত শারীরিক কার্যাবলী করা যেমন ব্যায়াম, হাটা চলা করা।
৩/ ডায়েট কন্ট্রোলে রাখা: স্বাস্থ্যকর ডায়েট স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
৪/ ধূমপান ও এ্যালকোহল জাতীয় জিনিস এড়িয়ে চলা উচিত।
৫/ ব্রেস্ট ফিডিং: যদি সম্ভব হয় মোট এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে নিজের শিশুকে স্তন্যপান করানো উচিত। এটি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এতে শিশুর জন্য দুর্দান্ত স্বাস্থ্য সুবিধাও রয়েছে।
৬/ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এড়িয়ে চলা উচিত।
৭/ পোস্ট-ম্যানোপোজাল হরমোন এড়িয়ে চলা উচিত।
৮/ ট্যামোক্সিফেন এবং রালোক্সিফিন মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এতে ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
লেখা: সুমাইয়া আহমেদ || চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ || বিডিএস (৩১ তম প্রজন্ম) ১ম বর্ষ।
