আমার বাবা পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। এ মহৎ কাজটি তিনি অনেক বছর ধরে করে আসছেন, এখনো করছেন। তিনি অতি সহজ সরল মানুষ হওয়ায় তাকে জীবনে অনেক বেশী দুঃখ, কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তিনি মানুষকে খুব সহজেই বিশ্বাস করেন। মানুষকে আপন করে নেন। সে যে ধরনের মানুষই হোক না কেন! আমার মনে হয় না, কোন মানুষ আজ পযর্ন্ত তার বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছে। আমি জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি, বিশ্বাসী মানুষগুলো তাকে অনায়েসে কিভাবে ঠকাচ্ছে, প্রতারিত করছে। তিনি না পারছেন কিছু করতে, না পারছেন কিছু বলতে। সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করতেন।আমার আম্মু যদি কখনো বলতো, তুমি মানুষকে এত বিশ্বাস কর কেন? তখন আব্বু শুধু একটু স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে বলতেন। তুমি ওসব বুঝবে না। বিশ্বাসী বন্ধু মানুষগুলো যদি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা না রাখে। তাহলে আমি কি করব? সমস্যাটা তো ওদের ভিতরে। মানুষের অনিষ্ট চিন্তা করতে আমার বাবাকে আমি কখনো দেখিনি। আশেপাশের কোন মানুষ বিপদে পড়লে, আমি দেখেছি কিভাবেতিনি মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতেন। যদিও তিনি নিতান্তই সামান্য বেতনের চাকুরী করতেন। তিনি তার সাধ্যের মধ্যে মানুষের জন্য সবকিছুই করার চেষ্টা করেছেন। তারপরেও আমি দেখেছি। এই সহজ সরল মানুষটা তার কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে কতটা প্রতারিত হয়েছে, কিভাবে বিভিন্ন জায়গায় হয়রানির স্বীকার হয়েছে। এত ঘটনার পরেও আমার বাবার মুখের হাসিটুকু কখনো মিলিয়ে যায় নি।
আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করি। একজন শিক্ষক এর মেয়ে হয়ে আমার বাবার মতই আদর্শবান মানুষ হওয়া আমার লক্ষ্য।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমার বাবা ও বিশ্বের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাকে জানাই শুভেচ্ছা।
–পলি ত্রিপুরা
